সড়ক আইনের বিধিমালা কার্যকরের দিন থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদন জমা নেওয়া শুরু হয়। ২০২৩ সালের ১৯ অক্টোবর ১৬২ জনকে আর্থিক সহায়তার চেক হস্তান্তরের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দেওয়া শুরু হয়।
বিধিমালায় ট্রাস্টি বোর্ড গঠন, তহবিল সংগ্রহ, ক্ষতিপূরণের পরিমাণ এবং তা বিতরণের পদ্ধতি সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। নিহত বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা গেলে ভুক্তভোগী ব্যক্তির পরিবার ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা পাবে। গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গহানি হলে ভুক্তভোগী ব্যক্তি পাবেন তিন লাখ টাকা। আহত কারও চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা না থাকলে আর্থিক সহায়তা তিন লাখ টাকা। তবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকলে পাবেন এক লাখ টাকা।
ট্রাস্টি বোর্ড পরিচালিত হয় বিআরটিএ কার্যালয় থেকে। ট্রাস্টি বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত আগস্ট পর্যন্ত ১ হাজার ৬৬৮টি চেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৪০৫ জন নিহতের পরিবার। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন ২৬৩ জন। সব মিলিয়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে ৭৪ কোটি ২২ লাখ টাকা।
প্রতিবেদন দাখিলের ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ট্রাস্টি বোর্ড আবেদনকারীর ব্যাংক হিসাবে ‘প্রাপকের হিসাবে প্রদেয়’ চেকের মাধ্যমে টাকা দেবে। অর্থাৎ দুর্ঘটনার দুই মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব। বিআরটিএর হিসাবে, ২০২৩ সাল থেকে গত আগস্ট পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ১৪ হাজার ২৪৫ জন। আহত হয়েছেন ১৮ হাজার ৫৫৫ জন।
অবশ্য বেসরকারি হিসাবে সড়কে হতাহত আরও বেশি। দেশের বিভিন্ন সংস্থার হিসাবে, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর সাত হাজারের বেশি মানুষ মারা যান। আহত হন ১০ হাজারের বেশি। শুধু গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে এই হিসাব করে দেশীয় সংস্থাগুলো। হাসপাতালে কিংবা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু এই হিসাবে আসে না। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালে প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে মৃত্যু ৩১ হাজার ৫৭৮।
প্রচারের অভাবে মানুষ ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে মনে করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সাইফুল আলম।
প্রক্রিয়াগত জটিলতা
সড়ক পরিবহন আইন অনুসারে, আর্থিক সহায়তা পেতে নির্ধারিত ফরমে দুর্ঘটনার সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে। অনুসন্ধান কমিটি ৩০ দিনের মধ্যে আবেদনকারীর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে প্রতিবেদন জমা দেবে।
প্রতিবেদন দাখিলের ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ট্রাস্টি বোর্ড আবেদনকারীর ব্যাংক হিসাবে ‘প্রাপকের হিসাবে প্রদেয়’ চেকের মাধ্যমে টাকা দেবে। অর্থাৎ দুর্ঘটনার দুই মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব।
দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণের দাবি মীমাংসার জন্য রয়েছে ১২ সদস্যের একটি ট্রাস্টি বোর্ড। বিআরটিএর চেয়ারম্যান পদাধিকারবলে বোর্ডেরও চেয়ারম্যান। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও পরিবহন খাতের মালিক-শ্রমিকেরা বোর্ডের সদস্য।
দুর্ঘটনার পর ক্ষতিপূরণের বিষয়ে তদন্ত করে সুপারিশের জন্য ১৪ সদস্যের স্থায়ী কমিটি রয়েছে। ঢাকার বাইরে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমিটির প্রধান। বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট সহকারী পরিচালক সদস্যসচিব। পুলিশ, পরিবহনমালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিরা সদস্য হিসেবে আছেন।
ভুক্তভোগী ও অধিকারকর্মীদের মতে, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা শোকের মধ্যে থাকেন। তাঁদের পক্ষে ৩০ দিনের মধ্যে সব প্রয়োজনীয় কাগজ জোগাড় করে তা জমা দেওয়া কঠিন। এ ছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পর জেলা প্রশাসকেরও অনুমোদন নিতে হয়। এই দুই পদের কর্মকর্তারা নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন। ফলে সময়মতো ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা কঠিন।
অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনার পর মামলা হয়। অন্ততপক্ষে পুলিশের নজরে আসে। তাই বিআরটিএ, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন আবেদনের বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে এলে আরও বেশি মানুষ ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন।
