অন্যের বাঁশ বাগানের নিচে ছোট্ট একটা বেড়ার ঘর। মাথার উপরে জরাজীর্ণ কয়েকটি টিন। রোদ বৃষ্টি যেন নিত্যসঙ্গী। এই খুপড়ি ঘরে কেটে গেছে ১৬টি বছর। সংসারের জিনিসপত্র বলতে কিছু বাটি-ঘটি আর ছেড়াছোটা পোষাক। একটা সময় অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করতেন। সেই আয়ের টাকা দিয়ে ছোট ভাইদের বড় করেছেন। এখন শরীর চলে না। তাই ভাইয়েরাও আর দেখে না। পিতার ভিটায় জায়গা পর্যন্ত হয়নি। বয়স প্রায় সত্তর ছুই ছুই। শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা অসুখ। যে বয়সে নাতি-নাতনিদের নিয়ে আনন্দঘন সময় কাটাতেন সেই বয়সে পরনির্ভশীল হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস গ্রামের বৃদ্ধা মুগলি খাতুন। নেই স্বামী, নেই সন্তান। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর ছোট ভাইদেরকে বাবা-মায়ের স্নেহে বড় করেছেন। আশা ছিল ৬ ভাই তাকে অসময়ে আগলে রাখবে। কিন্তু কারও কাছে জায়গা হয়নি। অন্যের জায়গায় খুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। আয় রোজগার না থাকায় দান দক্ষিণাই তার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।
মুগলি খাতুন বলেন, দীর্ঘদিন আমি একাই আছি। প্রায় ৫০ বছর আগে স্বামী মারা গেছে। একটি মেয়ে ছিলো সেও ৩০ বছর আগে মারা গেছে। আজ প্রায় ১৫ বছর ধরে স্থানীয় আসাদুলের জায়গাতে বসবাস করছি। পেটে-ভাতে লোকের বাড়িতে কাজ করে যতটুকু করেছিলাম তা ছোটছোট ভাই ছিলো তাদের পিছনে ব্যয় করেছি। এখন আর তাদের কাছে আমার কোন মূল্য নেই।
স্থানীয়রা বলেন, মুঘলি একজন অসহায় নারী। একটি মেয়ে ছিলো সে মারা গেছে। এখন সে একা হয়ে গেছে। তাকে দেখার মতোও কেউ নেই এখন। বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরে জীবিকা নির্বাহ করে। যে ঘরে থাকে সেটিও বসবাসের অযোগ্য। তার একটা মাথাগোঁজার ঠাঁই হলে ভালো হয়।
প্রতিবেশীরা বলেন, উনি খুবই অসহায়। তার কেউ নেই। পরের জায়গাতে বসবাস করে। বর্তমানে তার ঘরের টিনগুলো একেবারেই জরাজীর্ণ। বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি পড়ে। আমাদেরও তেমন কিছু নেই যে তার পাশে দাঁড়াবো। তারপরও যতটুকু পারি চেষ্টা করি।
বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য ছানোয়ার হোসেন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে যতটুকু পারি সাহায্য করি। তার বিধবা ভাতা করে দেওয়া হয়েছে কিন্তু বিধবা ভাতায় তো আর চলতে পারে না। তার জমি না থাকায় আমরা ঘরও দিতে পারছি না আবার যে আশ্রয় প্রকল্পের যে ঘরগুলো আছে সেখানে আমাদের এলাকার মানুষ যেতে চাই না।
অসহায় মুগলী খাতুনের পাশে মানবতার হাত বাড়ানোর আশ্বাস দিয়ে মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ মন্ডল বলেন, তিনি বিধবা ভাতা পাচ্ছেন। তারপরও একক ঘর বা নগদ অর্থ সহায়তা বা তার প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিবেচনা করছি। এসকল মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য উপজেলা প্রশাসন সবসময় সক্রিয় রয়েছে।