মেহেরপুর প্রতিনিধি:
কাঁটাতারের বেড়াজালের কারণে শেষবারের মত দেখা হলো না বাবার মুখখানি। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর বাবার মরদেহ নিয়ে ফিরে যেতে সন্তান ও স্বজনদের। মেহেরপুরের মুজিবনগরে বাংলাদেশ—ভারত সীমান্তে দুই দেশের শূন্যরেখায় বাংলাদেশ বা ভারতে মারা যাওয়া স্বজনের লাশ দেখানোর আয়োজন করে এক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের অবতারণা করে আসছে সীমান্তরক্ষীরা। কিন্তু আজ সেই সম্পর্ক যেন এক পলকেই ম্লান হয়ে গেলো। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মুজিবনগর সীমান্তের মেইন পিলার ১০৫—এর কাছে বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী রবিন দফাদারের মরদেহ ভারতে অবস্থান করা সন্তান ও স্বজনদের মরদেহ দেখানোর ব্যবস্থা করা হলেও শেষ দেখা হলো না বাবার মুখ। বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী রবিন দফাদার মুজিবনগর উপজেলার ভবরপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা কলনীর বাসিন্দা। বুধবার দিবাগত রাতে মুক্তিযোদ্ধা কলনীতে তার বাসভবনে বার্ধক্যজনিত কারণে পরলোক গমন করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী রবিন দফাদার তিন ছেলে ও দুই মেয়ের জনক। তাদের মধ্যে এক ছেলে ও দুই মেয়ে ভারতের কৃষ্ণনগর বসবাস করেন। তার মৃত্যুর পর ছেলে মাইকেল দফাদার ভারতে বসবাসকারী ভাই—বোন ও স্বজনরা শেষবারের মত বাবার মরদেহ যেন দেখতে পাই সেজন্য বিজিবির কাছে আবেদন করেন। পরে বিজিবি বিএসএফকে চিঠি দেয়। বিএসএফ’র পক্ষ থেকেও তাদের আশ্বস্ত করে। শেষবারের মত বাবার মুখ দেখতে ছুটে আসে সন্তানেরা। কিন্তু সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সীমান্তে দুই দেশের শূন্যরেখায় মরদেহ নিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করলেও বিএসএফ’ পক্ষ থেকে অনুমতি না পাওয়ায় ভারতে থাকা সন্তান ও স্বজনদের শেষ দেখা হলো না বাবার মরদেহ। অশ্রুসিক্ত চোখ আর এক বুক কষ্ট নিয়ে ফিরে যেতে হয়েছে তাদের। ছেলে মাইকেল দফাদার বলেন, এর আগেও এখানে লাশ দেখানো হয়েছে। যে কারণে আমরা আশায় ছিলাম ভারতে থাকা আমার ভাই বোন ও স্বজনরা শেষবারের মত বাবার মরদেহটি দেখতে পাবে। সেই আশা আমাদের পূর্ণ হলো না। সাবেক ইউপি সদস্য দিলিপ মল্লিক বলেন, মুজিবনগর বিজিবি কমান্ডার তার চেষ্টামত ভারতের হৃদয়পুর বিএসএফ ক্যাম্প প্রধানের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানালে তার সন্তান ও স্বজনদের মরদেহ দেখাতে আশ্বস্ত করেছিলেন বিএসএফ প্রধান। যে কারণে মুজিবনগর সীমান্তের মেইন পিলার ১০৫—এর কাছে বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী রবিন দফাদারের মরদেহটি নিয়ে আসা হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর একজন বিএসএফ এসে জানায় তাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কিছু জানায়নি। আমরা বলতে পারছি না কর্মকর্তারা অনুমতি দেবে কি দেবে না। এর আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী রবিন দফাদারকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ^াস বীর মুক্তিযোদ্ধার মরদেহে জাতীয় পতাকা দিয়ে আচ্ছাদিত করে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। এসময় পুলিশের একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ^াস রাষ্ট্রের পক্ষে রাষ্ট্রের পক্ষে সালাম গ্রহণ করেন।
