হাজার হাজার মানুষের চোখে জলে শেষ বিদায় দেওয়া হয় মেহেরপুর জেলা জামায়াতের সাবেক জেলা আমীর ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ছমির উদ্দীন কে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে নিজ বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়লে জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু বরণ করেন তিনি। রাতে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উপস্থিতিতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে মেহেরপুর পৌর কবরস্থানে বড় ছেলে শহীদ তারিক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের পাশে চিরনিদ্রায় সাহিত হলেন তিনি।
পারিবারিক সূত্রে জানাগেছে, দীর্ঘদিন পর গত শনিবার তিনি আমেরিকা থেকে মেহেরপুরে আসেন। দেশে এসেই জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এর দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন তিনি। গত ২৮ অক্টোবর ঐতিহাসিক পল্টন ট্রাজেডি দিবস উপলক্ষে জেলা জামায়াতের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। দাম্পত্য জীবনে তিনি ৫ ছেলে ৪ মেয়ের জনক ছিলেন। আজ সকালে নিজ বাড়িতেই শ্রমিক কল্যাণ কার্যনির্বাহী কমিটির সাথে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে সকলকে বিদায় দিয়ে বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ শরীরিক অবস্থা খারাপ হলে সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস করেন। মৃত্যুকালে তিনি ৪ ছেলে ও ৪ মেয়েসহ অসংখ্য গুণাগ্রাহী রেখে গেছেন।
মরহুমের বড় ছেলে ছিলেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি তারিক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় পুলিশের ক্রসফায়ার নাটকে নিহত হন তিনি।
ছমির উদ্দীনের মৃত্যুতে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ মেহেরপুর জেলা শাখাসহ অঙ্গসহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
আলহাজ্ব ছমির উদ্দিনকে বলা হয় মেহেরপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর স্তম্ভ। জেল জুলুম ও নানা রকম নির্যাতন সহ্য করেও সুদীর্ঘ সময় থেকে তিনি জামায়াতের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেছিলেন।
মরহুমের প্রথম জানাজা বাদ আসর
নিজ গ্রাম টুঙ্গী গোপালপুরে অনুষ্ঠিত হয়
হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উপস্থিতিতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে মেহেরপুর পৌরসভার কবরস্থানে দাফনসম্পন্ন করা হয় মেহেরপুর জেলা জামায়েত ইসলামীর সাবেক আমির ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ছমির উদ্দিন।
মঙ্গলবার রাতে মেহেরপুর সরকারি কলেজ মাঠে ২য় জানাজা শেষে মেহেরপুর পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাযার বক্তব্য রাখেন মেহেরপুরে-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি মাসুদ অরুন, মেহেরপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন, পৌর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস মেহেরপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. নজরুল কবির,কেন্দ্রীয় জামায়েত ইসলামীর নেতা আজিজুর রহমান, মেহেরপুর জেলা জামায়েত ইসলামীর আমীর মাওলানা তাজ উদ্দিন খান, চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়েত ইসলামীর আমীর অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন,জেলা হাজী সমিতির সভাপতি আক্কাস আলী,মেহেরপুর জেলা ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি আব্দুল কাদের, কুষ্টিয়া জেলা জামায়েত ইসলামীর আমীর আবুল হাশেম, ঝিনাইদহ জেলা আমীর আলী আজগর মো বক্কর, মরহুমের পুত্র তৌফিকুল ইসলাম, জামায়েত নেতা রুহুল আমিন, মেহেরপুর জেলা সেক্রেটারি ইকবাল হোসেন।
জানাযায় মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনেদা, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলার জামায়েত নেতা কর্মীসহ সর্বশ্রেণী পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
আলহাজ্ব ছমির উদ্দীন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে চাকুরী করতেন। চাকুরী শেষে তিনি দীর্ঘদিন কুয়েত ছিলেন। পরে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর রাজনীতিতে যুক্ত হন। তিনি রাজনৈতিক জীবনে মেহেরপুর সদর উপজেলা জামায়াতের আমীর নির্বাচিত হন। পরে তিনি দীর্ঘদিন মেহেরপুর জেলা জামায়াতের আমীর ও কেন্দ্রীয় জামায়াতের সূরা সদস্য ছিলেন। তিনি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
রাজনৈতিক জীবনে তিনি ২০০৬ সালের পর মেহেরপুর সামসুজ্জোহা পার্কে প্রকাশ্যে পুলিশ কর্তৃক নির্যাতন স্বীকার হন। তাঁর বড় ছেলে মেহেরপুর জেলা জামায়াতের তৎকালিন সেক্রেটারী ও জেলা ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি তারিক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি দুপুরে মেহেরপুর শহরের হোটেল বাজার এলাকায় ইসলামি ব্যাংকের কাছ থেকে পুলিশ আটক করেন। ওইদিন গত রাতে বন্দর গ্রামের শ্বসানঘাট এলাকায় কথিত ক্রস ফায়ারের নামে হত্যা করে। তারপরপরই আলহাজ্ব ছমির উদ্দীন তার আমেরিকা প্রবাসী মেঝো ছেলের কাছে চলে যান। তারপর তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করেন আওয়ামীলীগ সরকার। এছাড়া শহরের বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করে পুড়িয়ে দেওয়া হয় তাঁর বাড়িটি। ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আলহাজ্ব ছমির উদ্দীনের মায়ের মৃত্যুর সময় দেশে আসলে মায়ের জানাযা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। বেশ কিছুদিন হাজত বাসের পর জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও আমেরিকাতে চলে যান তিনি।
previous post