পুরো গ্রাম জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এক সাথে চারটি মৃত্যু এই প্রথম দেখছেন গ্রামবাসী। বিকালে মেহেরপুর সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের চার বোন পাশ্ববর্তী মসুরি ভাজা বিলে শাপলা ফুল তুলতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা যায়। আপন দুই বোন সহ তিন সহদরের চার শিশু কন্যার মৃত্যুতে শোকাভিভূত নিহতের পরিবার সহ পুরো গ্রামের মানুষ। রাত দশটায় জানাযার নামাজ শেষে গ্রামের কবরস্থানে পাশাপাশি সমাধিত করা হয় নিহত চার বোন কে। জানাজায় অংশ নেন নিহতদের পরিবার আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক সহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা।
রাজনগর মল্লিক পাড়া স্কুল মাঠে রাত দশটায় নিহত চার বোন ফাতেমা, মিম, আফিয়া ও আলসিয়ার জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযার নামাজে ইমামতি করেন জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা তাজউদ্দীন খান। এর আগে একে একে নিজ বাড়ি থেকে চার বোনের মরাদেহ খাটিয়া করে নিয়ে আসেন আপনজনেরা। রাখা হয় পাশাপাশি। জানাযার নামাজ শেষে একই সাথে দাফন করা হয় তাদের। এসময় দাফনে অংশ নেওয়া অনেক মুসল্লি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
কবর খোঁড়ার কাজে অংশ নেওয়া রাজনগর গ্রামের আয়ুব আলী বলেন, ৬৫ বছর বয়সে এই প্রথম এক সাথে চারটি কবর খোঁড়ার কাজ করলাম। এর আগে এক সাথে এত লাশ দেখেনি গ্রামবাসি। জানাযার নামাজের আগে নিহত ফাতেমার পিতা আব্দুস সামাদ বলেন, আমার দুই মেয়েকে আল্লাহ নিয়ে গেছেন। আপনারা আমার মেয়েদের জন্য দোয়া করবেন বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। নিহত মিমের পিতা ইসাহাক আলী মেয়ের জন্য দোয়া চেয়ে আর কোন কথা বলতে পারেন না। দাফন কাজে অংশ নেওয়া মোমিনপুর বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক
আফিয়া ও মিম তার স্কুলের ছাত্রী হিসেবে অনেক মেধাবী ছিলেন। তারা বিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন। এমন দুই জন ছাত্রী কে হারিয়ে পুরো বিদ্যালয় শোকাহত বলেন তিনি।
বার্তা মেহেরপুরের সাথে কথা বলেন দুজন প্রত্যক্ষদর্শী যুবক, তারা জানান বিকালে মসুরি ভাজা বিলের পাশ দিয়ে ভ্যানযোগে গ্রামে ফিরছিলেন দুই বন্ধু। এ সময় বিলের মধ্যে চারজন মেয়ে বারবার পানিতে ডুব দিচ্ছে আর হাত নাড়াচ্ছে। পাড়ে ওঠার চেষ্টা করছে বিষয়টি তাদের কাছে মনে হয়েছে তারা পানিতে খেলা খেলছে এজন্য তারা উদ্ধার না করে বাড়ি ফিরে যায়। কিছুক্ষণ পর জানতে পারে মেয়ে চারটি মারা গেছে। খবর শুনে দুই বন্ধু নিহতদের বাড়িতে তাদের দেখতে আসেন। তারা আরো জানান, আগে জানলে পানিতে নেমে তাদেরকে উদ্ধার করতেন কিন্তু তারা ভাবতে পারেনি যে চারজনের মধ্যে কেউ সাঁতার জানে না।
নিহত চার শিশু , অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতেমা ও মিম এবং চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আফিয়া ও আলসিয়া ।
নিহতের পরিবার জানান, শনিবার দুপুরে চার শিশু একসঙ্গে মসুরিভাজা বিলে (শাপলা) তুলতে যায়। বিকেল গড়িয়ে গেলেও তারা বাড়ি না ফেরায় পরিবারে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। পরে এলাকাবাসী বিলের পানিতে নেমে খুঁজতে থাকে। পরে স্থানীয়রা একে একে চার শিশুর মরাদেহ পানি থেকে তুলে আনে। খবর পেয়ে মেহেরপুর ফায়ার সার্ভিস ও সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।
দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো এলাকায় নেমে আসে গভীর শোকের ছায়া। একই পরিবারের চার কন্যাশিশুর এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে গ্রামজুড়ে চলছে আহাজারি। এদিকে চার শিশু কন্যার মৃত্যুর খবরে নিহতের পরিবারকে শোক জানাতে সাবেক এমপি ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মাসুদ অরুন, জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক এ্যাড: কামরুল হাসান, জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা তাজউদ্দীন খান ছুটে আসেন।
গ্রামবাসীরা জানান, ওরা প্রতিদিনই বিকেলে বিলের পাশে খেলতে যেত। আজও গিয়েছিল ফুল তুলতে। কেউ ভাবেনি এভাবে একসঙ্গে চারটা লাশ ফিরে আসবে।
