মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজিপুর ইউনিয়নের হাড়াভাঙ্গা গ্রামের হিন্দুপাড়ায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে জোরপূর্বক বাড়িতে প্রবেশ করে মোছাঃ বিলকিছ খাতুন (২৫) নামের এক গৃহবধূকে পেটে লাথি মেরে গর্ভপাতের ঘটনা ঘটেছে।
ভুক্তভোগী মোছাঃ বিলকিছ খাতুন (২৫) হাড়াভাঙ্গা হিন্দু পাড়ার সুমন আলীর স্ত্রী। একই গ্রামের তমেজ উদ্দিনের পরিবারের সাথে দীর্ঘদিন ধরে মনোমালিন্য ছিলো সুমন আলীর পরিবারের। যেকোনো ছোট খাটো বিষয় নিয়ে সুমন আলীর পরিবারের উপর নির্যাতনসহ হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে তমেজ আলীর পরিবার। তমেজ আলীর পুত্র রাসলে হোসেন (২৫) ও জালাল হোসেন (৩০) দীর্ঘদিন ধরে পেশিশক্তির প্রভাবে ঘায়েল করে আসছে অসহায় সুমন আলীকে।
গত (১২ ডিসেম্বর) আনুমানিক সকাল ১০ ঘটিকায় সুমন আলীর বাড়িতে প্রবেশ করে গালিগালাজ করতে থাকে তমেজ উদ্দিনের স্ত্রী নুরজাহান খাতুন এবং পুত্রবধূ মৌসুমী খাতুন। সুমন আলীর স্ত্রী বিলকিছ খাতুন ঘরে থেকে বাইরে বের হয়ে গালিগালাজ করার কারণ জানতে চাইলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন তমেজ উদ্দিনের স্ত্রী নুরজাহান খাতুন।
কোন কারণ ছাড়াই গালিগালাজ করতে নিষেধ করলে বিলকিছ খাতুনকে দেখে নেওয়ার কথা বলেন তিনি। (১২ ডিসেম্বর) আনুমানিক রাত ৯ ঘটিকায় বাঁশের লাঠি এবং দেশীয়-অস্ত্র নিয়ে সুমন আলীর বাড়িতে জোরপূর্বক প্রবেশ করে তমেজ উদ্দিন ও তার দুই পুত্র।
অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে তমেজ উদ্দিন। তার দুই পুত্র বাড়ি-ঘর ভাংচুর করতে থাকে। বাড়ি-ঘর ভাংচুর করতে বাঁধা দিলে সুমন আলীর মা রাহাতুন খাতুনকে বাঁশের লাঠি দিয়ে আঘাত করে তমেজ উদ্দিন।
সুমন আলীর স্ত্রী বিলকিছ খাতুন বলেন, আমার শ্বাশুড়িকে মারধর করার সময় আমি বাঁধা দিলে রাসেল হোসেন আমার গলা টিপে ধরে মুখে কিল ঘুসি মারে। এবং মাটিতে ফেলে দিয়ে আমার পেটে অনবরত লাথি মারতে থাকে। সাথে সাথেই আমার পেটে অসহ্য যন্ত্রণা ও রক্তপাত শুরু হয়। আমার পেটে ৩ মাসের সন্তান উদ্দেশ্য মূলকভাবে নষ্ট করে দেয়। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চায়।
সুমন আলী বলেন, আমাকে তমেজ উদ্দিনের জমিতে থাকা লিপিয়া ঘাস কাটার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার মা এবং স্ত্রীর উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায় তারা। আমি ঘটনার সময় বাড়ির বাইরে ছিলাম। পরবর্তীতে স্হানীয়রা আমায় খবর দিলে আমার স্ত্রীকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করায়। এবং ঘটনার জন্য ৬ জনের নামে গাংনী থানায় মামলা দায়ের করি।
ঘটনার সময় উপস্থিত এবং মামলার স্বাক্ষী মজিবর রহমান জানান, বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুনে সুমনের বাড়িতে গিয়ে দেখি তমেজ উদ্দিন ও তার ২ পুত্র অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারপিট করছে। পরে লোকজন জড়ো হয়ে বাধা দিলে তারা চলে যায়। মেয়েটার পেটে লাথি মারার ফলে ৩ মাসের বাচ্চা মারা গেছে। পরে তার স্বামীকে ডেকে এনে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
মামলাটির তদন্ত ইন্সপেক্টর জহির রায়হান জানান, মামলাটি ৪৪৭/৩২৩/৩১৩/১১৪/৫০৬/৩৪ ধারায় রেকর্ড করা হয়েছে। মামলাটির তদন্ত প্রক্রিয়াধীন থাকা অবস্থায় (২৭ ডিসেম্বর) মেহেরপুর জেলা জজকোর্টে ৫ জন আসামি আত্মসমর্পণ করে।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, মামলাটি তদন্ত চলমান অবস্থায় আসামীগণ জজকোর্টে আত্মসমর্পণ করেছে।